প্রিয় সোনা মেয়ে
,

কোহিনূর ইসলাম
তুমি কোথায় আছো মা?
তোমার ছোট্ট ঘরটা আজও তোমার গন্ধে ভরে আছে, কিন্তু তুমি নেই।
জানো, আজ ভোরবেলা তোমার প্রিয় চায়ের কাপটা বানিয়ে টেবিলে রেখে দিয়েছিলাম—অচেতনভাবে।
মনে হচ্ছিল, তুমি এখনই এসে বলবে, “বাবা, একটু বেশি দুধ দিয়েছো, না?”
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মনে পড়লো—তুমি তো নেই…
এই দূরত্বটা শুধু জায়গার নয় মা,
এটা বুকের মাঝখান দিয়ে কেটে যাওয়া কষ্টের দূরত্ব।
তুমি চলে যাওয়ার পর, এই বাড়িটা এক একটা ইট হয়ে গেছে বোঝা,
এই উঠোনটা নিঃশব্দে শুধু তোমার পায়ের শব্দ খোঁজে।
তুমি কি ভালো আছো, মা?
খেয়েছো ঠিকমতো?
রাতে একা ঘুমাতে ভয় করছিল না তো?
তোমার তো আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল!
তুমি বলেছিলে, “বাবা, কেউ যেন কখনো আমায় ছেড়ে না যায়।”
অথচ এখন তুমি নিজেই সব ছেড়ে চলে গেলে!
বাবা হয়েও আমি তোমার বন্ধু হতে পারিনি…
তোমার কিছু চাওয়া, কিছু না বলা অনুভূতি বুঝে উঠতে পারিনি,
তোমার চোখের ভাষা পড়িনি আমি, যতটা পড়া উচিত ছিল।
আমার কথা, নিয়ম, কড়া চোখ—
সব হয়তো তোমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।
আমার ভিতরেই ছিলো ভুল,
আর সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছে আজ আমার নিঃসঙ্গ বুক।
জানো মা,
প্রতিদিন আমি তোমার শৈশবের সেই ছবিগুলো দেখি,
যেখানে তুমি বাবার গলায় ঝুলে হেসে হেসে বলছো—“আমার রাজা বাবা!”
সেই রাজা বাবা আজ রাজ্যহীন হয়ে বসে আছে,
শুধু অপেক্ষা করে—তুমি ফিরে আসবে বলে।
ফিরে এসো মা…
একটুও বকা দেবো না,
একটুও প্রশ্ন করবো না,
শুধু একবার এসে বলো—“বাবা, আমি ফিরে এসেছি।”
আর যদি ফিরে না আসো…
তবু একটা চিঠি দিও, একটা খবর দিও,
অন্তত জানিও তুমি ভালো আছো কিনা।
এই বাবার বুকটার প্রতিটি স্পন্দন এখন কেবল তোমার খোঁজে ধুকপুক করে।
তোমার মা আজও জানালার ধারে বসে আছে,
যেন তুমি আবার সেই ছোটবেলার মতো দৌড়ে এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
সোনা, বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে।
তোমার কোনো ভুল থাকলে মাফ করে দেব,
শুধু ফিরে এসো, মা…
এই বাড়িটা, এই উঠোনটা, এই ভাঙা বুকটা—সবকিছু শুধু তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে।
ভালোবাসা ও চোখের জলে ভেজা কণ্ঠে,
তোমার ‘অপেক্ষায় থাকা’ বাবা।
0 Comments