ইতিহাসের কাছে মিনতি
কোহিনূর ইসলাম
হাজার বছর পেরিয়ে যদি সভ্য হয় ধরণী,
মানবতা জাগে যদি নারী-পুরুষে সমবেদনী—
তবে ইতিহাসের পাতায় তারা খুঁজবে প্রশ্ন,
এই কেমন যুগ ছিল, এত নিষ্ঠুর, এত নিষ্ঠুর সত্য?
নদীর কিনারায় পড়ে থাকবে ক্ষতবিক্ষত দেহ,
নবজাতক নিথর, কাঁদবে জ্ঞানে জ্ঞানহারা কেহ।
হায়! কী বর্বর জাতি ছিল,
মেয়ে জন্মে কাঁদত—সন্তান হত্যা করত মা-ও অবলীল।
লেখা থাকবে ইতিহাসে, খেলায় কোটি কোটি ব্যয়,
আর পাশেই অনাহারে পড়ে, একেকটা প্রাণ নিভে যায়।
ভাতের অভাবে রোগে মরে,
ঔষধের অভাবে কেউ ফুটপাথে, কেউবা মন্দিরের চোরে।
নারীরা তখন বলবে হেসে, “ভাগ্যিস সেই কালে আসিনি জন্মাতে!”
যে কালে মেয়ের জন্মে রাগে ঘর আলো করতো না বাবা-মা তাতে।
তবে সবচেয়ে বেশি আঁচড় ফেলবে এই লাইন,
পাঁচ বছরের শিশু, বৃদ্ধা – ধর্ষিত—এই কালে, এই সমাজের ছাইন।
বৃদ্ধা ইতিহাস পড়তে গিয়ে ভেঙে ফেলবে চশমা,
কেননা বৃদ্ধাশ্রমে সন্তান থাকতেও কাঁদে আজন্ম মায়েরা, অসহায় সাদা চুল-গা।
চোরের ভয় এত, মসজিদের জুতা থাকে না নিরাপদ,
সভ্যতা দেখে হতবাক, থুথু ফেলবে মুখে—নহে কোন শ্লাঘ।
দোহাই তোর ইতিহাস!
আমার কথা লিখিস না, রাখিস না এই নৃশংস গাঁথা পাশে পাশ।
আমি দেখতে পারি না এসব, সহ্য হয় না,
চোখের জলে ভাসি, তবু রুখতে পারি না।
শিরা কেটে দিলে রক্ত, দিলাম অন্তরের ক্ষত—
তবু কি মরুর ধুলো থামে? থামে কি অনিয়মের পট?
আমি নীরব, আমি একা, মাথা ঠুকে মরেছি দেয়ালে,
তবু আশার প্রদীপ নিভে যায়নি, পুণ্য রেখেছি বাঁচার পাল্লায়।
প্রভু! এই পুণ্য কাজের ওজস দিয়ে করো সমাজ রক্ষা,
এই যুগের ব্যথা থামুক, জাগুক শুভ শক্তির ডাক ছাপোষা।
হে ইতিহাস, যদি লেখ তবু, লিখো আমার প্রার্থনার ছায়া,
এই অন্যায় ভরা যুগে কেউ অন্তত তো চেয়েছিলো কিছু বদল হায়া।।

0 Comments